পাসওয়ার্ড ম্যানেজার

পাসওয়ার্ড ম্যানেজার কি? কেন ব্যবহার করবেন?

আমাদের দৈন্দদিন জীবনে ইন্টারনেট এখন অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। একজন সাধারাণ ইন্টারনেট ইউজার বর্তমানে প্রতিদিন এভারেজে ২ ঘণ্টা ২৫ মিনিট সময় ইন্টারনেটে ব্যায় করে থাকে, এর থেকেই বোঝা যায় ইন্টারনেট আমাদের জীবনে কত বড় অংশ হয়ে গেছে।

বাস্তব জীবনে আমাদের যেমন কিছু নিয়ম কানুন আছে, ঠিক তেমনি ইন্টারনেটও রয়েছে বিভিন্ন নিয়ম কানুন। যেমন একটি হলো ইন্টারনেটে বিভিন্ন সাইটে একাউন্ট তৈরি করা, যা বলা যায় আপনার এক প্রকার আইডেনটিটি তৈরি করার মতো।

প্রতিদিন বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হয়, এই ওয়েবসাইট থেকে সেই ওয়েবসাইট, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ভিজিট করতে হয়, এই সাইটগুলো ব্যবহার করতে প্রয়োজন হয় ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড। একজন সাধারণ ইউজারের পক্ষে এত এত আইডি পাসওয়ার্ড মনে রাখা কি সম্ভব? 

বিশেষ করে আমরা যারা আইটি সেক্টরে কাজ করি, তাদের তো সাধারণ ইউজারের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি আইডি পাসওয়ার্ড মেইনটেইন করতে হয়, যা মনে রাখা কোন ভাবেই সম্ভব নয়, আর এখানেই পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের কাজ।

যদি সহজ ভাষায় উদাহরণ দেই: মনে করুন একটি ঘরের ঘেতর অনেকগুলো বক্স রয়েছে এবং প্রত্যেকটি বক্সে তালা লাগানো আছে, এখন প্রত্যেকটি তালার চাবি তো আপনার কাছে রাখা সম্ভব নয় তাই আপনি ঘরে দরজায় একটি তালা লাগালেন এবং সেই একটি চাবি আপনার কাছে রেখে দিলেন। 

এখানে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার টা হচ্ছে, আপনার সেই ঘরের একটি চাবির মতো। পাসওয়ার্ড ম্যানেজারেও আপনাকে ওই একটি চাবির মতো একটি মাস্টার পাসওয়ার্ড মনে রাখলেই চলবে। ঘরে ওই একটি চাবি দিয়ে যেমন দরজা খুলে বাকি সবকিছুর এক্সসেস করতে পারবেন, ঠিক তেমনি পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের মাস্টার পাসওয়ার্ড দিয়ে অন্য সব বাকি আইডি পাসওয়ার্ড এক্সসেস করতে পারবেন।

পাসওয়ার্ড ম্যানেজার কেন ব্যবহার করবেন?

আমরা যেহুতু এত এত সব আইডি পাসওয়ার্ড মনে রাখতে পারিনা, তাই সিম্পেল ওয়েতে যেটা অনেকেই করি, কোথাও আইডি পাসওয়ার্ড ফিজিক্যালি লিখে রাখি বা ইন্টারনেটে কোন ডক ফাইল, ওয়ার্ড ফাইল, শিট বা এক্সেল ফাইলে স্টোর করে রাখি। কিন্তু এটা অনেক বিপদ জনক একবার যদি আপনার এই স্টোর করা ফাইলের এক্সেসেস কারো হাতে পড়ে যায় আপনার সমস্ত আইডি পাসওয়ার্ডের ১২ বেজে যাবে। 

তাছাড়া এই পদ্ধতিতে সেভ করে রাখার আরো একটা ঝামেলা হলো, যখন আইডি পাসওয়ার্ডের প্রয়োজন পড়ে তখন এটি আবার কপি করে এনে পেস্ট করতে হয়, ফিজিক্যালি লেখা থাকলে সেটা দেখে দেখে টাইপ করতে হয়।

আর এখানেই পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের খেলা 🙂 পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের কাজ হলো আপনার সমস্ত সাইটের আইডি পাসওয়ার্ড কে সেভ করে রাখা। এখানে আপনাকে অনেকগুলো পাসওয়ার্ড মনে রাখতে হবে না, শুধু পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের মাস্টার পাসওয়ার্ডটি মনে রাখলেই চলবে।  চলুন এক নজরে পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের সুবিধাগুলো দেখে আসি:

আইডি পাসওয়ার্ড সেভ করে রাখা

পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের সব থেকে বড় সুবিধা হলো এর মাধ্যামে আপনি যে কোন সাইটের আইডি পাসওয়ার্ড সেভ করে রাখতে পারবেন এবং পরবর্তীতে যখন ওই সাইট ব্যবহার করতে যাবেন আপনাকে আইডি পাসওয়ার্ড মনে রাখতে হবেনা, পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের সাহায্যে কয়েক ক্লিকেই লগিন করতে পারবেন।

সিকিউর

পাসওয়ার্ড ম্যানেজারগুলো অনেক বেশি সিকিউর হয়ে থাকে ওয়াল্ডের ভালো ভালো সব সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্টরা পাসওয়ার্ড ম্যানেজার মেইনটেইন করে থাকেন, যার ফলে আপনার ডাটা অনেকটাই সেফ থাকবে।

আইডি পাসওয়ার্ড শেয়ার অপশন

অনেক সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের অন্য কারো সাথে আইডি পাসওয়ার্ড শেয়ার করতে হয়, যার সাথে শেয়ার করা হচ্ছে সে আইডি পাসওয়ার্ড সবকিছু দেখে ফেলে, এর কারণে কাজ শেষ হয়ে যাবার পর আমাদের ওই পাসওয়ার্ডটি আবার চেঞ্জ করে নিতে হয় আবার অনেক সময় তো আমরা চেঞ্জ করতে ভুুলেই যাই। এটা খুবই একটা ঝালেমার প্রসেস কিন্তু পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের সাহায্যে আপনি অন্য কারো সাথে ইজিলি আইডি পাসওয়ার্ড শেয়ার করতে পারবেন ইনক্রিপটেড ওয়েতে, যার ফলে সে কাজ করতে পারবে ঠিকই কিন্তু পাসওয়ার্ড দেখতে পারবে না।

মাল্টিপল ডিভাইস এক্সসেস

পাসওয়ার্ড ম্যানেজার আপনার কম্পিউটার, ল্যাপটপে যেমন ইউজ করতে পারবেন ঠিক তেমনি মোবাইল বা অন্য কোন ডিভাইসে ইজিলি ইউজ করতে পারবেন এবং এটা সবকিছু অটো সিনক্রোনাইজ হবে।

নোট রাখা

পাসওয়ার্ড ম্যানেজারে আপনি প্রয়োজনীয় নোট ডকুমেন্ট রাখতে পারবেন, যেহুতু এটি অনেক সিকিউর হয়ে থাকে তাই সিকিউরিটি নিয়ে তেমন চিন্তা থাকেনা।

অটো ফিল অপশন

আপনি যদি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে কোন সাইটে লগিন করার সময় আপনাকে কষ্ট করে কপি পেস্ট, বা টাইপ করতে হবেনা, আইডি পাসওয়ার্ড আপনাকে অটো ফিল করে দিবে।

পাসওয়ার্ড জেনারেট

যখন কোন নতুন পাসওয়ার্ড তৈরি করার প্রয়োজন পড়বে পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের সাহায্যে আপনি ইজিলি সিকিউর পাসওয়ার্ড জেনারেট করে নিতে পারবেন, এটি আপনাকে স্ট্রং পাসওয়ার্ড জেনারেট করে দিবে।

সিকিউরিটি সাজেশন

আপনি ইতিমধ্যে যে পাসওয়ার্ডগুলো ব্যবহার করছেন তাতে কোন উইক পয়েন্ট আছে কিনা, কোন পাসওয়ার্ড টা চেঞ্জ করা প্রয়োজন ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের সিকিউরিটি সাজেশন দিবে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার।

বেস্ট ৩ টি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার

মার্কেটে এই মুহূর্তে অনেক ভালো ভালো পাসওয়ার্ড ম্যানেজার রয়েছে, কিন্তু আমি পারসোনালি এই ৩ টা ব্যবহার করেছি যা আমার কাছে অনেক সিকিউর মনে হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top