অনলাইনে ইনকাম

কেন প্রথম দিনেই কারো পক্ষে অনলাইনে ইনকাম করা সম্ভব হয় না?

প্রশ্নটা একটু অদভূত, কিন্তু ঠিক এই প্রশ্নটাই ২০২০ সালে এক ব্যাক্তি Quora তে করেছিলো। এই প্রশ্নের জবাবে সেখানে যা উত্তর দিয়েছিলাম তা নিচে তুলে ধরলাম🙂

ও হ্যাঁ এখানে গেলে Quora তে আমাকে পাবেন👉 https://bn.quora.com/profile/Rezaul-Islam-Tasin

অনলাইনে ইনকাম কি ছেলের হাতের মোয়া? যে ইচ্ছে করলেই খেয়ে ফেললাম?

আপনার কাছে একটি প্রশ্ন রাখি: কলেজের প্রথম দিনেই কেন একজন শিক্ষার্থী ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যায় না?

কলেজের প্রথম দিনেই যেমন একজন শিক্ষার্থী ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার হয় না, দিনের পর দিন বছরের পর বছর প্ররিশ্রম করে লেখাপড়া করে যেতে হয়, তাঁরপর একটি নিদিষ্ট সময় পর সে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যায়।

ঠিক তেমনি প্রথম দিনেই অনলাইনে ইনকাম সম্ভব নয়। অনলাইনে যদি লং টাইম সারভাইব করতে চান, যদি ভালো ক্যারিয়ার গড়তে চান তবে একজন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার যেই পরিমাণ লেখাপড়া করে,পরিশ্রম করে তাঁর থেকে বেশি পরিশ্রম করার মন মানসিকতা থাকতে হবে। নয়তো নোকিয়া,ইয়াহু বড় বড় প্রতিষ্ঠানের মতো নিজেও একদিন হারিয়ে যাবেন।

বাস্তব দুনিয়াতে আমরা যেমন হাজারো রকমের ছোট বড় পেশা দেখি, ঠিক তেমনি অনলাইনেও হাজারো রকমের পেশা রয়েছে। কোনটা একটু সহজ আবার কোনটা একটু কঠিন। তবে সহজ মানে একদম সহজ বলতে কিছু নেই যে, শর্টকার্টে কয়েকদিনের মধ্যেই ইনকাম শুরু হয়ে যাবে। কম্পিউটার কেনার পর একজন বিগেনারের মিনিমাম ৬ মাস থেকে ১ বছর সময় লাগবে যে কোন সেক্টরে স্কিল ডেভেলোপ করে ইনকাম করার জন্য।

অনলাইনে ইনকাম করতে কি পরিমাণ পরিশ্রম করা লাগে তা একজন প্রোগ্রামার কে দিয়ে উদাহরণ দেই:

অনলাইনে ইনকাম করার আশায় কম্পিউটার কিনে একজন বিগেনারের প্রোগ্রামিং শিখতে মিনিমাম ১-২ বছর সময় লেগে যায়। তাঁরপর সে মোটামুটি কিছু ইনকাম করার পর্যায়ে চলে যায়। ১-২ বছর পর যে সে একদম প্রোগ্রামিং এর গুরু হয়ে যাবে তা নয়, এন্ট্রি লেভেল বা মিড লেভেলে পৌছে যাবে। এর পর সে চাইলে ইনকামের পাশাপাশি স্কিল ডেভেলোপ করার মাধ্যমে আরো সামনে এগিয়ে যেতে পারবে।

ধরে নিলাম তাঁর মিড লেভেল পর্যন্ত আসতে সময় লেগেছে ২ বছর। তাঁরপর যে কোন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজে এক্সপার্ট হতে এবং অন্য সব বিষয়ে ব্যাসিক জ্ঞান অর্জন করতে সময় লেগেছে আরো ২ বছর, সব মিলিয়ে ৪ বছর। এখন তাঁর শেখার পালা কি এখানেই শেষ?

এটা যদি একজন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার এর ক্ষেত্রে হতো তাহলে কি হতো? ৪ বছরের কোর্স কমপ্লিট তারপর হয়তো কিছুদিন ইন্টার্নি করতো ব্যাস তাঁরপর আর তাঁকে প্রতিনিয়ত আগের মতো অত কিছু শিখতে হচ্ছে না। কারণ একজন ডাক্তার জানে তাঁর পেশেন্ট আসলে কি করতে হবে, তাঁর কাজ কি আবার একজন ইঞ্জিনিয়ার জানে তার কাজ কি তাঁকে কখন কি কি করতে হবে।

কিন্তু একই সময় পার করার পরও একজন প্রোগ্রামার নিদিষ্ট করে জানে না তাঁর কাজ কি। প্রোগ্রামার এর কাছে যেমন ডাক্তার আসবে সফটওয়্যার বানানোর জন্য ঠিক ইঞ্জিনিয়ারও আসবে সফটওয়্যার বানানোর জন্য। প্রোগ্রামার তখনি সফটওয়্যার বানাতে পারবে যখন ডাক্তারি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশুনো করবে তখন।

ঠিক এভাবেই একজন পোগ্রামারের প্রথম কয়েক বছর পরিশ্রম করে যেতে হয় তাঁরপর সে এমন একটা পর্যায়ে পৌছায় যেখানে তাঁর জন্য কাজটা সহজ হয়ে যায়, তাই বলে শেখার পালা শেষ হয়ে যায় না। আজকে এই প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ দিয়ে কাজ করছে মানে আগামীতেও এটাতেই কাজ হবে এমন কোন ভরসা নেই। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন টেকনোলজি আসছে সেই টেকনোলজির সাথে নিজেকেও আপডেট করে নিয়ে নতুন কিছু শিখে নিতে হচ্ছে।

এটা যে শুধু পোগ্রামারদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা নয়, অনলাইনে যে কোন কাজে লং টাইম সারভাইব করতে চাইলে সবসময় নতুন কিছু শেখার মধ্যে থাকতে হয়।

আসলে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অনলাইনে উপার্জনের বিষয়টা এমন ভাবে তুলে ধরা হয়েছে যে, কম্পিউটার কিনে নিয়ে বসে গেলাম আর ডলার আসা শুরু করলো, কিছু একটা সিক্রেট আছে যেটা একবার জানলেই আর ডলার কামানো থামাই কে।

যেখানে বছরের পর বছর পরিশ্রম করেও অনেকেই সফল হতে পারছে না, সেখানে প্রথম দিনেই ইনকাম করার প্রশ্ন টা কিভাবে মাথায় আসে বুঝতে পারি না। মনে রাখবেন এক লাফে কেউ তাল গাছে উঠতে পারে না, হ্যাঁ যদি স্পাইডারম্যান হয় তাহলে পারবে🙂

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top